একুশ শতকের প্রথম প্রান্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের তারুণ্য যখন যান্ত্রিকীকরণ, অতি আধুনিকায়ন ও তার প্রতিযোগিতায় ক্রমশঃ বিমানবিকতার দংশনে জর্জরিত, তখন সংস্কৃতির বিশাল আকাশে সুস্থতা ও স্বকীয়তার দ্যূতি নিয়ে নক্ষত্রের মত সফেন’র আবির্ভাব। সফেন-এর বিশ্বাস সংস্কতির সাগর সঙ্গমে আবগাহন মানে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা, নিজের বিশ্বাসকে শাণিত করা; সর্বোপরি নিজস্ব মানবিক পরিচয়ের ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখা। দেশজ সংস্কৃতির লালন ও অপসংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা ও পুনরুজ্জীবিত করতে সফেন-এর এই আয়োজন। কেননা সফেন বিশ্বাস করে, নিজের শেকড় থেকেই আমাদের শক্তি আহরণ করতে হবে। কারণ দেশের প্রকৃত ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি চর্চার মধ্যেই জাতির অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ নিহিত। ১৯৯৭ সালে ১ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির শ্যামল চত্বরে সফেন-এর মূল উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা ড. খান আসাদুজ্জামান ওরফে আসাদ শাহরিয়ার -এর আহŸানে পড়ন্ত বিকেলের এক সুন্দর সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে সফেন এর জন্ম। এর পূর্ণনাম- Society for Enlightening Nation (SOFEN)|
১৯৯৭ হতে ২০২১ সাল। পঁচিশ বছর, এক সুদীর্ঘ পথ। অনেক কঠিন সময় পাড়ি দিতে হয়েছে সফেন- কে। অদম্য সাহস, সু-কঠিন ধৈর্য্য, গভীর সততা আর প্রানান্ত পরিশ্রমের ফলে সফেন আজ গোটা জাতির সামনে এক আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় যাঁরা সফেন-এর স্বপ্নদ্রষ্টা ড. খান আসাদুজ্জামান এর দায়িত্বশীল অভিভাবকের ভ‚মিকায় থেকে প্রতিনিয়ত বটবৃক্ষের ন্যায় সফেন কে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ছাঁয়া দিয়ে যাচ্ছে তাঁরা হলেন সফেন -এর নির্বাহী উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. রফিকউল্লাহ খান, সফেন -এর বর্তমান চেয়ারম্যান ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপকার ডাঃ অনিশ কুমার সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. গোলাম আহমেদ ফারুকী, জয়েন্ট ভাইস চেয়ারম্যান জনাব মোঃ সফিকুল ইসলাম চৌধুরী প্রমূখ। এছাড়া সফেন প্রয়াত চেয়ারম্যান শিল্পী নীলুফার ইয়াসমীন ও শিল্পী অধ্যাপক ড. মৃদুল কান্তি চক্রবতী’র নাম বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য।
“প্রত্যয়ী সেবার হাত” বা Hands to serve সফেন এর অন্যতম মূলমন্ত্র। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সফেন সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি মানুষের জীবনের সামগ্রিক কল্যাণ ও সমৃদ্ধির জন্য যেমন কাজ করে যাচ্ছে, তেমনি রিক্ত, অসহায় ও দুঃস্থ আর্তমানবতার সেবায় প্রতিনিয়তই বাড়িয়ে দিয়েছে প্রত্যয়ী সেবার হাত।
যারা শিল্পিত মন ও প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনা নিয়ে সত্য ও সুন্দরের সাধনা করতে চান, তাদের জন্য সফেন’র দ্বার উন্মুক্ত। সফেন’র যারা মূল চালিকাশক্তি, তারা প্রায় সবাই বয়সে তরুণ। আমাদের রয়েছে অফুরন্ত স্বপ্ন, আছে প্রবল কর্ম উদ্দীপনা। কিন্ত সাধ্যের সীমাবদ্ধতা নিয়তই আমাদেরকে থামিয়ে দিতে চায়। শত বাঁধার প্রাচীর পেরিয়ে তবুও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব, কারণ আমরা সূর্যের কাছে যেতে চাই-দীপ্ত স্বপ্ন আমাদের চোখে।
এক. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি জীবনমুখি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সমাজের দুস্থ অবহেলিত ও কর্মজীবী শিশুদের সাবলম্বী ও কর্মক্ষম করে তোলার লক্ষ্যে সফেন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (SIS) নামে স্বতন্ত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।
দুই. সফেন গ্রন্থশালা : সফেনের একটি গ্রন্থশালা বা পাঠাগার থাকবে। এই লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে উল্লেখিত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে- ১. স্থান ব্যবস্থাপনা ২. সেলফ্ ব্যবস্থাপনা ৩. বই সংগ্রহ ৪. ক্যাটালগ ব্যবস্থাপনা ৫. সিটিং ব্যবস্থাপনা ৬. প্রয়োজনীয় কর্মচারী নিয়োগ যেমন ক. লাইব্রেরি সহকারী খ. সিকিউরিটি গার্ড গ. পিয়ন ইত্যাদি।
তিন. পত্রিকা : সফেন এর একটি মাসিক পত্রিকা থাকবে প্রস্তাবিত নাম সময়ের কণ্ঠস্বর। যার মাধ্যমে- ১. গুনীজনদের লেখা প্রকাশ ২. লেখা-পড়া বিষয়ক লেখা ৩. বিজ্ঞান ও কম্পিউটার বিষয়ক জ্ঞানচর্চা ৪. পাঠক ফোরাম গঠন এবং ৫. কুইজ ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করে দেশ ও জাতি গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করা।
চার. সফেন শিক্ষা বৃত্তি : সফেন শিক্ষা বৃত্তি প্রবর্তনের মাধ্যমে দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সঠিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষা ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা।
পাঁচ. শুভেচ্ছা বিনিময় : সফেন চেতনার ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে বিশেষ উৎসবগুলিতে পুণর্মিলনী ও শুভেচ্ছা কার্ড প্রেরণের মাধ্যমে হৃদ্রতা ও সমপ্রীতির বন্ধন দৃঢ় করে তোলা।
ছয়. ত্রাণ কার্যক্রম : ঈদ, পূঁজা ও বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে গরীব ও দুঃস্থ শিশু এবং নারী-পুরুষের মাঝে নগদ অর্থ ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা।
সাত. বর্ষপঞ্জি প্রকাশ : সফেন এর বাৎসরিক কর্মকাÐ সম্বলিত বর্ষপঞ্জি প্রকাশ করা, যাতে মাদক, যৌতুক ও এসিড নিক্ষেপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান থাকবে।
আট. রক্তদান কর্মসূচি : সেবার মন্ত্রে উদ্ভাসিত হয়ে বৎসরে এক বা একাধিক বার স্বেচ্ছায় সফেনের পক্ষ থেকে রক্তদান কর্মসূচি পালন।
নয়. বিভাগ ও জেলা ভিত্তিক কার্যক্রম : সারা বাংলাদেশে অচিরেই তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজকল্যাণমূলক নানাবিধ সেবা কার্যক্রম শুরু করা।
দশ. মহিলা বিবাহ : দুঃস্থ, অসহায়, অনাথ ও এসিড দগ্ধ মেয়েদের বিবাহ অনুষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতাসহ সামগ্রিক সহয়তা প্রদান এবং যৌতুক বিহীন বিয়ের ব্যবস্থা করা।